জেলায় বোরো উৎপাদনে কৃষকদের বাজিমাত : রেকর্ড ২ লাখ ১৪ হাজার টন উৎপাদন

এম.বেদারুল আলম •

কক্সবাজারে এ বছর বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকায় সরকার সার ও বীজে বিশেষ প্রনোদনা দিয়ে কৃষকদেরস্বার্থ রক্ষা করায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

গত ১৮ মে পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ধান ২ সপ্তাহের মধ্যে ঘরে তুলবে কৃষকরা এমনটাই জানিয়েছেন জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মোঃ এখলাস উদ্দিন।

আগামিতে যেহেতু কালবৈশাখীর আশংকা রয়েছে সেহেতু কৃষকরা যেন পাকা ধান দ্রæত কর্তন করে ঘরে তুলে নিয়ে যায় এমন পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। মওসুমের শুরুতে রাবার ড্যামের সমস্যার কারনে সদরে সামান্য উৎপাদন কম হলেও সেটি মোট উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বেনা বলেও দৈনিক কক্সবাজারকে নিশ্চিত করেন ডিডি মোঃ এখলাছ উদ্দিন।
এদিকে বোরোর বাম্পার ফলনের কারনে কৃষকরা মহাখুশি। এ কর্মকর্তার দাবি কক্সবাজারে বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকবো। যদি শতভাগ পাকা ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পারে তাহলে জেলার সব মানুষের যোগান দিয়ে চাল উদ্বৃত্ত থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মোঃ এখলাছ উদ্দিনের তথ্যমতে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বোরো ধানের উপজেলা ভিত্তিক জমি আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবং অগ্রগতি নির্ধারণ করা হয়। জেলায় চলতি বোরো মওসুমে ৫৩ হাজার ৩শ ৬০ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে সম্ভ্যাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৩ হাজার ১০০ মেট্রিক টন চাল।

যেহেতু ৮৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে আরো ১৫ শতাংশ কাটা বাকি রয়েছে সে কারনে লক্ষ্যমাত্রা নিরুপন করতে কাটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে যেভাবে মাঠে ফসল উৎপাদন ভালো হয়েছে সে কারনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য শতভাগ ধান র্কতন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গত বছরের বোরো মওসুমের চেয়ে এ বছর ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। মওসুমের প্রারম্ভে সদরের ২টি এবং রামুর ২টি ইউনিয়নের চাষিরা জমিতে পানি ভালো ভাবে সেচ দিতে পারেনি। যার ফলে উৎপাদনে কিছুটা বিঘœ ঘটে। তবে নীট উৎপাদনে সার্বিকভাবে বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে উপজেলা ভিত্তিক আবাদ ও উৎপাদনের অগ্রগতি যথাক্রমে চকরিয়ায় ১৭ হাজার ২১৫ হেক্টরে ৬৯ হাজার ৭০০ মেঃ টন। পেকুয়ায় ৭ হাজার ২শ হেক্টরে ৪৫ হাজার ৩শ ৭৫ মেঃ টন। রামুতে ৬ হাজার হেক্টরে ২৩ হাজার ৭শ ৮২ মেঃ টন। সদরে ৬ হাজার ৭শ হেক্টরে ২৬ হাজার ৫শ ৩০মেঃ টন। উখিয়ায় ৬ হাজার ৪৬০ হেক্টরে ২৫ হাজার ৮৪মেঃ টন। টেকনাফে ১ হাজার ১শ ১৫ হেক্টরে ৪ হাজার ২শ ৬৫ মেঃ টন। মহেশখালীতে ৭ হাজার ২৫ হেক্টরে ২৮ হাজার ৪শ ২ মেঃ টন এবং কুতুবদিয়ায় ১ হাজার ৬শ হেক্টরে ৬ হাজার ২২৮ মেঃ টন।

জেলায় বোরো মওসুমে ৩ জাতের ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এদের মধ্যে ১২৪২৪ হেক্টরে হাইব্রীড জাতের ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৪,১২৪ মেট্রিক টন, উফশী জাতের ৪১ হাজার ৩৬ হেক্টরে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২শ ৬৪ মেঃ টন এবং স্থানীয় জাতের ৩৫৫ হেক্টরে ৭২০ মেঃ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, কৃষকরা নির্দেশনা মেনে চাষ করায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি জাত বিনা ২৮, ১৯, ব্রি- ৭৪, ৬২, ৩৩, ৫৮ জাত খুবই ভাল ফলন হয়েছে।

শুরুতে একটি মাত্র ইউনিয়ন পিএমখালীতে পানির জন্য সমস্যা হলেও পরে সেটা কেটে গিয়ে কৃষকরা ভালো উৎপাদন করেছে। আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা ছাড়াই এবার কৃষকরা বোরোতে বাম্পার উৎপাদন করেছে। ধানের দাম থাকায় কৃষকরাও সন্তুষ্ঠ।

আমাদের পরামর্শের বাইরে নিজ উদ্যোগে কৃষকরা স্থানিয় লাল ধান, হাইব্রিডের মধ্যে সুপার, হীরা, পান্না, ময়না জাত উৎপাদন করে চমৎকার দিয়েছে। বোরো ধানের বাম্পার উৎপাদনের ফলে কক্সবাজার জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে মনে করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।